বগুড়ার মহাস্থান ভ্রমণের গাইড লাইন। - Multi language center- Bogura.

Contact No: 01948652556

পরবর্তি কোর্স শুরুর তারিখঃ- ১০/০৪/২০২৫ ইনশাআল্লাহ।

2025/03/10

বগুড়ার মহাস্থান ভ্রমণের গাইড লাইন।

 মহাস্থান বা পন্ড্রনগরী



মহাস্থান বগুড়া শহড় থেকে ১১ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিম কোণে, করতোয়া নদীর পশ্চিম পাশে অবস্থিত। আমি প্রত্যেক ভ্রমণস্পট সম্পর্কে ইতিহাস খুব একটা বলবো না। আমি প্রত্যেক ভ্রমণস্পটের যাওয়ার ব্যাবস্থা, সতর্কতা, সুবিধা, অসুবিধা, অবশ্যই পালনীয় কিছু তথ্য দিব ইনশাআল্লাহ্। আজকে আপনাদের মোটামুটি ২ দিনের ভ্রমণ প্লান দিচ্ছিএই গাইড লাইনে ১) মমোইন ২) বেহুলা-লক্ষিনন্দরের বাসর ঘড়, ৩) মহাস্থানগড়, ৪) দুধ পাথর, ৫) রাজা পরশুরামের রাজ প্রাসাদ, ৬) জিয়ৎ কূপ, ৭) মহাস্থান জাদুঘড়, ৮) গোবিন্দ ভিটা, ৯) মশলা গবেষণা কেন্দ্র, ১০) কালিদহ সাগর, ১১) মহাস্থান পর্যটন পার্ক, ১২) শিলা দেবীর ঘাট, ১৩) মমোইন পার্ক এগুলো উপভোগ করার তথ্য দিব



১) নাম্বার পয়েন্টঃ-

বগুড়া শহড়ের প্রাণ কেন্দ্র সাত মাথা থেকে রওণা করে, ১ নাম্বার পয়েন্টে নামতে পারেন। এখানে "মমোইন" হোটেল এবং আবাসিক আছে। লাক্সারী হোটেলে থাকা খাওয়াসহ রাতে বার-বি-কিউ এর ব্যাবস্থা আছে। এখানে হেলিকপ্টারে ভ্রমণের স্বাধও নিতে পারবেন। আছে কৃত্তিম লেগের পানিতে রাতে বোডে ঘোরার ব্যাবস্থা। রাতে থাকার জন্য এখানে রুম বুকিং দিতে পারেন

২) বেহুলা-লক্ষিনন্দরের বাসর ঘড়ঃ-


এর পরে বেহুলা-লক্ষিনন্দরের বাসর ঘড় দেখতে মমোইন থেকে ৫ কিঃ মিঃ গিয়ে বাম সাইটে গোকুল
ষ্ট্যান্ড পাাবেন
। সেখান থেকে ১.৫ কিঃ মিঃ পশ্চিমে গেলেই বেহুলা-লক্ষিনন্দরের বাসর ঘড় দেখতে পাবেন। মটর সাইকেল থাকলে, ২০ টাকা ফি দিয়ে ভিতরে নিয়ে যাবেন। মেইন গেটের অপর পাশে খাবারের হোটেল আছে। পরিবেশ খুব ভালো না হলেও সস্তায় ভালো খাবার পাবেন

৩) মহাস্থানগড়ঃ-


গড়ের মেইন গেটের ভিতরে একটু জায়গা আছে, সেখানে মটরসাইকেল বা গাড়ি রাখবেন। ওখানকার খাদেমকে ১০ টাকা দিলেই সে গাড়ির দিকে একটু খেয়াল রাখবে। তাছাড়া এটা নিজ দায়িত্বে গাড়ি রাখার জায়গা। তারপরে উপরে গিয়ে বড় জামে মসজিদ আছে, সেখানে নামাজ পরেন। আশে-পাশের ঐতিহাসিক স্থাপনা গুলো দেখেন। হযরত শাহ্-সুলতান (রহ) এর মাজার শরিফ দেখেন। পাশেই একটি কূপ আছে, এটাকে জিয়ৎ কূপ ভাববেন না। এটা সাধারণ পানি খাওয়ার কূপ ছিল। এর পরে এখান থেকে আংটি, তসবীহ্, জায়নামাজ সহ কিছু কিনতে চাইলে, কিনে পশ্চিম সাইটের রাস্তা দিয়ে নেমে যান


মহাস্থানের এই স্পেশাল কটকটি খাইতে চাইলে এই দোকানের মালিকের সাথে যোগাযোগ করুন। তারা কুরিয়ার সার্ভিসেও কটকটি পাঠায়। (01719-707391 / 01782-627106)


৪) দুধ পাথরঃ-


সামনে দেখেন একটা বিশাল বটগাছ আছে, এর নিচে যেই পাথরটা আছে এটাকেই আল্লাহর দানের পাথর বা দুধ পাথর বলে। এটি মূলত রাজা পরশুরাম নর বলির জন্য ব্যবহার করত। এই পাথরের আশে-পাশে প্রচন্ড গন্ধ। কারণ এর উপরে কাঁচা দুধ, সীদুর সহ বিভিন্ন জিনিস উৎসর্গ করে। আর এগুলো পচেঁ দুর্গন্ধ হয়। ওখানে অনেক পাগলা-পাগলী থাকবে, ঝারি মেরে টাকা-পয়সা খসাইতে পারে সাবধান

৫) জিয়ৎ কূপ ও রাজা পরশুরামের রাজ প্রাসাদঃ-



দুধ পাথর দেথার পরে, উত্তর দিকে রওণা দেন। এখানে একটা মন্দিরের ধ্বংসস্তুপ দেখে পূর্ব দিকের চিকন রাস্তা দিয়ে মহাস্থান গড়ের আশ্চার্য স্থাপত্ব শৈলী "সীমানা প্রাচীর" এর উপরে উঠেন। একটু সামনে গিয়ে হাতের বামে রাজা পরশুরামের প্রাসাদ। আর প্রাসাদে ঢোকার আগেই জিয়ৎ কূপ। এক যুগের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে, রাজা পরশুরামের সৈন্য মারা গেলে এই কূপে ফেলে দিত। আর  কিছুক্ষন পরে সেই সৈনিক জিবিত হয়ে উপরে উঠে আসত। এই জন্য হযরত শাহ্-সুলতান (রহ) রাজার সাথে যুদ্ধে জিততে পারছিল না। কূপের একদম নিচে থেকেই সীড়ি করা আছে যেন মানুষ নিচে থেকে বেয়ে উঠে আসতে পারে 
মহাস্থান গড়ের দক্ষিণ পাশের এক মুসলিম (সৈয়দ বোরহান উদ্দিন গিলানী) তার সন্তানের জন্য মানত করা গরু জবেহ দিলে, রাজা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে হত্যা করে। কিন্তু ঐ গরুর মাংশ একটা পাখি তার ঠোটে করে নিয়ে রাজার জিয়ৎ কূপে ফেলে দেয়। তার পর থেকে ওই কূপ থেকে মৃত সৈনিক আর জিবিত হতে পারত না। আর তার পরেই রাজা পরশুরামের পরাজয় হয়। হযরত শাহ্-সুলতান (রহ) পরশুরামকে পরাজিত করে, হত্যা করার পরে তার রাজ্য ও মন্ত্রী পরিষদ সবাই আস্তে আস্তে ইসলামের ছায়া তলে আসে

৭) জাহাজ ঘাট ও মহাস্থান জাদুঘড়ঃ-


আবার ওই সীমানা প্রাচীর বেয়ে উত্তর দিকে রওণা দেন। কিছুদুর আসার পরে প্রাচীর থেকে নেমে হাতের ডান দিকের মেইন রোড বেয়ে একটু খানি গেলেই জাহাজ ঘাট। এখানে টিকিট কেটে ভিতরের সুন্দর একটা প্রকৃতিক পরিবেশ পাবেন। এখানে ব্যাগে কিছু খাবার পানি থাকলে, বের করে খান এবং একটু বিশ্রাম নিন। এখান থেকে বের হয়ে যাদুঘড়ে প্রবেশ করুন। তবে মিউজিয়ামের ভিতর ক্যামেরা নেওয়া নিষেধ। এখানে প্রাচীন কালের সুন্দর সুন্দর শিল্প কর্ম দেখতে পারবেন। যাদুঘড়টি প্রতি রবিবারে বন্ধ থাকে



৮) গোবিন্দ ভিটাঃ-


যাদুঘড়ের ঠিক অপর দিকেই গোবিন্দ ভিটা। এখানে ১০ টাকা টিকেটে ভিতরে প্রবেশ করতে পারবেন। এটি একটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ, এর চার পাশে সরু সুরঙ্গ আছে। তাই এখানে বাচ্চাদেরকে সাথে নিয়ে যাবেন না। তাহলে হয়তবা বিব্রতকর পরিস্থিতীতে পরা লাগতে পারে। এখানে কিছু নোংড়া লোক নোংড়ামী করে, এগুলো দেখার কেউ নাই। আমার ছেলেকে নিয়ে গিয়ে এরকমটা হয়েছিল

৯) মশলা গবেষণা কেন্দ্রঃ-

আর একটু উত্তর দিকে গেলেই মসলা গবেষণা কেন্দ্র। এখানে দেখার ঐতিহাসিক তেমন কিছু নেই। আপনাদের হাতে সময় থাকলে গিয়ে দেখে আসতে পারেন

১০) কালিদহ সাগরঃ-

এটা মূলত করতোয়া নদীর একটি অংশ। মহাস্থান গড়ের পশ্চিম উত্তর কোণের দিকে এটি অনেক প্রশস্থ ছিল। এবং জাহাজের মালামাল এখানে লোড-আনলোড করা হতো। কথিত আছে, এই দিক দিয়েই হযরত শ্হ্-সুলতান মাহী সাওয়ার (রহ) মাছের আকৃতির একটি নৌযানে চড়ে মহাস্থান গড়ে আসরের নামাজের আগে পৌঁছায়। আবার অনেকেই এটি স্বয়ং একটি মাছের পিঠে চড়ে আসার কথা বলেন। আর এই প্রশস্ত এলাকাটাকে সাগরের মত দেখাত তাই এইটুকুকে নদী না বলে সাগর বলা হতো
গড়ের পশ্চিম পাশের জন বসতীপূর্ণ এলাকার ভিতর দিয়ে পায়ে হাঁটা পথে এখানে যেতে হবে

১১) মহাস্থান পর্যটন পার্কঃ-

টয়লেটে যাইতে হলে আপনাকে একমাত্র গড়ের উপরে মসজিদ, আর এই পার্কে আসতে হবে। তারপরে হালকা নাস্তা করার জায়গাও এখানে পাবেন। নদীর পাশে সুন্দর বসার জায়গা আছে। সেখানে বসে একটু বিশ্রাম নেওয়া সহ হালকা কিছু খাবার খাওয়া যেতে পারে। পাশে দিয়ে করতোয়া নদী বয়ে গেছে, তাই ভিউটা একেবারে খারাপ না। এখান থেকে এই নদীর ভাটির দিক বা দক্ষিণ দিকে ২০০ গজ গেলেই শিলা দেবীর ঘাট। বিশ্রাম শেষে সেখানে যাইতে পারেন

১২) শিলা দেবীর ঘাটঃ-



কিছু কিছু ঐতিহাসিকগন শিলা দেবীকে রাজা পরশুরামের স্ত্রী বলত। তবে বেশির ভাগই তাকে রাজার বোন বলে জানত। কথিত আছে, বর্তমান গড়টা শিলা দেবীর আস্তানা ছিল। হযরত শ্হ্-সুলতান মাহী সাওয়ার (রহ) এর হাতে ভাইয়ের হত্যার সংবাদ শুনে কষ্ট সইতে না পেরে করতোয়া নদীর ওই ঘাটে গিয়ে আত্মহুতী দেন। এখানে পারলে একটু পরন্ত বিকেলে যাবেন, তাহলে শত শত বছর আগের  সেই শিলা দেবীর ঘাটে নিজেকে আবিস্কার করতে পারবেন। তবে সেই রকম কবি কবি ভাবের একটা মন লাগবে

১৩) মমোইন পার্কঃ-

সব শেষ করে মমোইন হোটেল থেকে পূর্ব দিকে অবস্থিত মমোইন পার্কে চলে যাবেন। মমোইন পার্ক এবং মমোইন হোটেল আপনাদের শেষ গন্তব্য করবেন। কারন এখানে অনেক একটিভেটিস করার জায়গা আছে। এখানে রাতের ভিউটা অনেক সুন্দর, আশা করি আপনাদেরও ভালো লাগবে

এই ভ্রমণস্পট গুলো একদিনে কাভার করলে, কোথাও মজা পাবেন না। তাই তারাহুরো না করে, দুই দিনের একটা ট্যুর প্লান করুন


No comments:

Post a Comment