কোরিয়ায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এগুলো সন্বন্ধে জানুন।
আমরা অনেকেই না জেনে, না বুঝে, অথবা পরিচিত কেউ দক্ষিণ কোরিয়ায় গিয়ে বাড়ি-গাড়িসহ অনেক কিছু করে ফেলেছে। এটা শুনেই চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি যে, আমিও কোরিয়া যাব। কিন্তু দক্ষিন কোরিয়াতে যাইতে নিজের যেই যোগ্যতা গুলো থাকতে হবে, সেটা খেয়াল না করেই বা না জানার কারণে অনেক দুর পর্যন্ত চলে যাই। তারপরে দেখা যায় নিজের অনেক অযোগ্যতা, দুর্বলতা বা পরিস্থিতির শিকার হয়ে সর্বপরি আল্লাহ্ পাক না চাওয়ার কারণে শেষ পর্যন্ত আর কোরিয়ায় যাওয়া হয় না। তখন হতাশা আর দুশ্চিন্তায় ভবিশ্যতটা অবহেলা আর অবিশ্বাসে কেটে যায়। এই সময় কখনও নিজের ভাগ্যকে দোষ দিবে, কখনও ইপিএস সিস্টেমটাকে গালি দিবে, কখনও বোয়েসল বা এইচ আর ডি কোরিয়াকে গালি দিবে। তার থেকে প্রথমে জানুন, তারপর এই পথে পা বাড়ান।
১) কত টাকা খরচ হতে পারে। ২) চোখের পরীক্ষা করা। ৩) জন্ম নিবন্ধন এবং NID করা।
৪) নিরপরাধ থাকা। ৫) ইন্টারনেট ব্যাংকিং জানা।
( ১ ) খরচের পরিমানঃ-
আমরা সেই ইপিএসের শুরুতেই কোরিয়াতে যাইতে ৮০,০০০ টাকা খরচ হইত, সেই মালা এখনো যপতেছি। কিন্তু সেই খরচ এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে সেই খেয়াল কারোই নেই। আর থাকলেও হয়তো শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য, সবাই এই মিথ্যাটা বলে থাকে। যাইহোক, যারা প্রথম বারের মত কোরিয়াতে যাওযার স্বপ্ন দেখতেছেন। তাদের এই বিষয়ে একটু ধারণা থাকা প্রয়োজন। তাই আপনাদের উদ্দেশ্যে এই খরচের একেবারে সঠিক হিসাব দিতে না পারলেও, মোটামুটি একটা ধারণা দেওয়ার চেস্টা করবো ইনশাআল্লাহ্।
ক) পাসপোর্ট তৈরী করাঃ-
আমাদের দেশে আগে হাতে লেখা পাসপোর্ট ছিল। তারপর সেটাকে ডিজিটাল পাসপোর্টে পরিবর্তন করা হয়েছিলো। আর বর্তমানে সেইটা ই - পাসপোর্টে উন্নত করা হয়েছে। আর এখন এই ই-পাসপোর্ট করারা ক্ষেত্রে সরকার অনেক চেস্টা করেছে খুব দ্রুততার সহিত সহজেই জনগনের কাছে পৌছে দেওয়ার। কিন্তু ঐ যে আমাদের খারাপ অভ্যাস আছে, তাই এই ই-পাসপোর্ট করতে গেলেও বেশ কিছু পাসপোর্ট অফিসে নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। এই ই-পাসপোর্টের জন্য কিভাবে অনলাইনে দরখাস্থ করবেন, আমার এই ওয়েব সাইটে তাব বিস্তারিত একটি পোস্ট দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। এই ই-পাসপোর্ট করতে হলে আপনার সবমিলে ৮,০০০-১০,০০০ টাকা লাগতে পারে। পাসপোর্ট সম্পর্কে আরোও জানতে এখানে ক্লিক করুন।
খ) ভাষা শেখাঃ-
দেশের বিভিন্ন স্থানে কোরিয়ান ভাষা শিখতে বিভিন্ন ধরণের খরচ হয়ে থাকে। ২০,০০০-৫০,০০০ টাকার বেশিও কিছু কিছু জায়গায় খরচ হয়। তবে, আমার কোচিং সেন্টারের কোরিয়ান ভাষা পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করার মত যোগ্যতা তৈরী করে দেওয়া পর্যন্ত মোটামুটি ৩০,০০০ টাকা খরচ হয়।
জেনারেল সিবিটির কোর্স ফিঃ-
** কোর্স ফি - ১৫,০০০ টাকা।
** মেয়াদ - ৩ ( তিন ) মাস।
** বাবুর্চি বা কুক বিল - ৫০০ টাকা মাস
** খাবারের বিল - আনুমানিক ১,৫০০ - ২,০০০ টাকা মাস। শিক্ষার্থীদের ভিতর থেকেই একজন মেস ম্যানেজার নির্ধারণ করা হয়। এবং সবার সন্মতিকৃমেই বাজার করা হয়।
** বেড ভাড়া- ১,৫০০ টাকা মাস। (বেড ভাড়া, কারেন্ট বিল, ইন্টারনেট বিল, পানির বিলসহ)
স্পেশাল সিবিটির কোর্স ফিঃ-
** কোর্স ফি - ১৫,০০০ টাকা।
** মেয়াদ - ২ ( দুই ) মাস।
** বাবুর্চি বা কুক বিল - ৫০০ টাকা মাস
** খাবারের বিল - আনুমানিক ১,৫০০ - ২,০০০ টাকা মাস। শিক্ষার্থীদের ভিতর থেকেই একজন মেস ম্যানেজার নির্ধারণ করা হয়। এবং সবার সন্মতিকৃমেই বাজার করা হয়।
** বেড ভাড়া- ১,৫০০ টাকা মাস। (বেড ভাড়া, কারেন্ট বিল, ইন্টারনেট বিল, পানির বিলসহ)
গ) রেজিস্ট্রেশনঃ-
অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন যেইদিন করবেন, সেইদিন বোয়েসল বরাবর ৫০০+ টাকা বিকাশ করে তারপর অনলাইন রেজিস্ট্রেশন সম্পুর্ণ করতে হবে। চুড়ান্ত রেজিস্ট্রেশনের জন্য যদি নির্বাচিত হন ( লটারীতে নাম উঠে ), তাহলে কয়েক দিন পরেই বোয়েসলে স্ব-শরীরে উপস্থিত হয়ে চুড়ান্ত রেজিস্ট্রেশন সম্পুর্ণ করতে হবে। তখন, রেজিস্ট্রেশন ফি সহ যাতায়াত, খাওয়া - দাওয়া মিলে প্রায় ৪,০০০ টাকা লাগবে।
ঘ) পরীক্ষা দেওয়াঃ-
চুড়ান্ত রেজিস্ট্রেশন সম্পুর্ণ করে সবাই মনোযোগ সহকারে পরীক্ষার জন্য প্রস্ততি নিবেন। করনার মত মহামারী দেখা দিলে তার চিকাৎসা বা তার টেস্ট বাবদ কিছু খরচ হবে। তারপর পরীক্ষার দিনের যাতায়াত, খাওয়া দাওয়া খরচ বাবদ ২,০০০ টাকা।
ঙ) মেডিকেল ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্সঃ-
পরীক্ষায় পাশ করার পরে মেডিকেল সার্টিফিকেট, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সহ স্ব শরীরে বোয়েসলে এসে জব এপ্লিকেশন জমা দিতে হবে। আগে মেডিকেল করার জন্য ঢাকায় নিদৃষ্ট একটি ডায়গনস্টিক সেন্টারে যাইতে হতো। এখন এই বিষয়টাকে অনেক সহজ করে, নিজ নিজ জেলার সিভিল সার্জন অফিসের মাধ্যমে মেডিকেল সম্পুর্ণ করানো হচ্ছে। সিভিল সার্জন অফিসের ফি, ডায়াগনিস্ট সেন্টারের ফি, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এগুলোসহ গাড়ি ভাড় খাওয়া দাওয়া মিলে আনুমানিক ৮,০০০ - ১০,০০০ টাকা খরচ হবে।
চ) জব এপ্লিকেশন জমাঃ-
কাগজ পত্র সব কিছু প্রস্তত করে জব এপ্লিকেশন জমা দেবার জন্য ঢাকায় যাইতে হবে। স্ব - শরীরে বোয়েসলে গিয়ে জব এপ্লিকেশন জমা দিয়ে আসতে মোটামুটি ২,০০০ টাকা খরচ হবে ( দুরুত্বের হিসাব অনুযায়ী কম বেশি হতে পারে )।
ছ) টিটিসির ট্রেনিংঃ-
সব কিছু ঠিক ঠাক থাকলে এবং আল্লাহ্ পাক আপনার রিজিক কোরিয়াতে লিখে রাখলে, আপনার ভিসা ইস্যু হবে। তারপরে ঢাকা দারুস সালামে অবস্থিত কোরিয়া বাংলা ট্রেনিং সেন্টারে ট্রেনিং অনুষ্ঠিত হবে। ১৪ দিনের ট্রেনিং শেষে একটা পরীক্ষা হবে, সেই পরীক্ষায় ফেল করলে ৪,০০০ টাকা জরিমানা সহ পরের ব্যাচের সাথে পুনরায় ট্রেনিং করতে হবে। এই ট্রেনিং বাবদ আনুমানিক ১০,০০০ - ১৫,০০০ টাকা খরচ হবে।
জ) বোয়েসলে ফি জমাঃ-
সিসিভি আই ইস্যু হবার পরেই বোয়েসলের সমস্ত ফি জমা দিতে হবে। অনেকের এই ট্রেনিং-এ আসার আগেই, অনেকের ট্রেনিং চলাকালে, আবার অনেকের ট্রেনিং শেষ করার ১ বা ২ মাস পরেও এই সিসিভি আই ইস্যু হয়। এই সিসিভি আই ইস্যু হওয়া নিয়ে চিন্তিত হবার কিছু নাই, এইটা একেক জনের একেক সময় লাগে। সিসিভি আই ইস্যু হবার পরেই বোয়েসলের দেওয়া তারিখ অনুযায়ী আপনাকে বোয়েসলের নির্ধারিত সার্ভিস ফি পরিশোধ করতে হবে। যেহেতু সিসিভি আই ইস্যু হয়েছে, তাই এই দিনেই আপনার শ্রম চুক্তিও স্বক্ষরিত হবে। আর এই দিনেই বোয়েসলের নির্ধারিত ফি, গাড়ি ভাড়া, খাওয়া দাওয়া সহ আনুমানিক ৪০,০০০ টাকা লাগবে।
ঝ) জামানত এবং ফ্লাইটঃ-
ফ্লাইট শিডিউল ঘোষণা হবার পর, জামানত এবং ফ্লাইটের টাকা জমা দিতে হবে।
১) জামানতঃ-
বোয়েসল, ঢাকা বরাবর সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, মগবাজার শাখায় ফেরৎযোগ্য ১,০০,০০০ ( এক লক্ষ ) টাকা জমা করতে হবে। উল্লেখ্য যে, দক্ষিণ কোরিয়ায় গমনের পর কোন কর্মী ইপিএস শর্ত ও চাকুরীর শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে জামানত বিষয়ক নির্দেশিকা ২০২০ এর ১০/১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জামানত কর্তন বা বাজেয়াপ্ত করা হবে। এই জামানত উত্তলনের দিক নির্দেশনা মূলক একটি পোস্ট খুব শিঘ্রই দিব ইনশাআল্লাহ্।
২) প্লেন ভাড়াঃ-
ডলারের দামের উপর নিচে যাওয়ার কারণে কম বেশি হতে পার। তারপরেও আনুমানিক ৫০,০০০ টাকা।
সর্বোমোট খরচ = আনুমানিক ২,৬০,০০০ - ২,৭০,০০০ টাকা। ( করোনার সময়ে যাইতে হলে, এর সাথে বাংলাদেশ এবং কোরিয়াতে কোয়ারেন্টাইনের জন্য আরোও প্রায় এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা বেশি লাগতো )
মনে রাখবেন, প্রত্যেক জায়গাতে টাকা জমা দেওয়ার পরে অবশ্যই রিসিভ কপিটা সংরক্ষণে রাখবেন। এবং মোবাইলে ছবি তুলে রাখবেন। বিশেষ করে, জামানতের টাকা, ও বোয়েসলের সার্ভিস চার্জের ফি পরিশোধ করতে সোনালী ব্যাংকে আপনি টাকা জমা দিলে, ব্যাংক থেকে দুইটা চেক দিবে। ওই চেক দুইটা বোয়েসল জমা নিয়ে চেকের অবশিষ্ট অংশ ( মুরি ) আপনাকে দিবে। এই মুরি দুইটা কোন ভাবেই হারানো যাবে না। কারণ কোরিয়া থেকে এসে যখন এই জামানত তুলতে যাবেন, তখন এই মুরি ছাড়া টাকা পাবেন না।
২) চোখের পরীক্ষা করাঃ-
কোরিয়ান ভাষা শেখার আগে আপনার চোখ অবশ্যই পরীক্ষা করে দেখবেন। কারণ অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা এই বিষয়টাকে গুরুত্ব না দিয়েই, ভাষা শেখা শুরু করে। তারপর লটারীতে নাম উঠে পরীক্ষা দেয়, এবং ভাল নাম্বার পেয়ে পাশও করে। তারপরে চক্ষু পরীক্ষায় ফেল করে বাতিল হয়ে যায়। তাই এই বিষয়টা গুরুত্বের সাথে দেখা উচিৎ।
৩) জন্ম নিবন্ধন এবং NID করাঃ-
যাদের জন্ম নিবন্ধন এবং NID করা নাই, তারা অবশ্যই করে নিবেন। যাদের একটা আছে অন্যটা নাই, তারা দুইটাই করে নিবেন। জন্ম নিবন্ধন এবং NID কার্ড করার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন।
৪) নিরপরাধ থাকাঃ-
আপনার যদি কোরিয়াতে যাওয়ার ইচ্ছা থাকে, তাহলে নিজেকে সকল ধরণের অপকর্ম, এবং অপরাধ থেকে বিরোত রাখুন। আপনার উপরে যেন কোন কারণে কঠিন সাজা ( জেল ) না হয়। আপনার উপর যেন, বাংলাদেশ সরকারের প্রদত্ত বহির্গমন নিষেধ না থাকে।
৫) ইন্টারনেট ব্যাংকিং জানাঃ-
দক্ষিণ কোরিয়া একটি উন্নত এবং সত্যিকারের ডিজিটাল দেশ। তাই এখানে যাইতে হলে নিজেকে একটু ডিজিটালাইজড্ করতে হবে। তাছারাও যখন অতিরিক্ত তূষারপাত হয়, তখন রুমের বাহিরে যাওয়া যায় না। সেই সময় যেন, ঘড়ে বসেই ইন্টারনেট থেকে বাজার-ঘাট, কেনা- কাটা করে বিল দিতে পারেন। তাছাড়া জরুরী প্রয়োজনে বাড়িতে টাকা পাঠানোর প্রয়োজন হলে যেন, রুমে বসেই বাড়িতে টাকা পাঠাতে পারেন। এই সকল যোগ্যতা দেশে থেকেই অর্জন করা উচিৎ।
sir
ReplyDeleteশারীরিক কোন যোগ্যতা লাগে কি না (বিষেশ করে উচ্চতা) জানাবেন
na
Deleteখুব ভালো লাগছে
ReplyDeleteঅনেক সহজে বোধগম্য হয়েছে
আমার চোখে পাওয়ার আছে -.75 আমি কি আবেদন করতে পারবো
ReplyDelete
ReplyDeleteআমার চোখের পাওয়ার+২৫। আমি কি করতে পারব?
আমি যেতে আগ্রহী ইমার্জেন্সি কত টাকা লাগবে।ভাই
ReplyDeleteএকজন মেয়ে লোকের কত লাগবে,,,plz
ReplyDeleteThanks for information
ReplyDelete